চট্টগ্রাম গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম নগরীর ৮টি থানা ও ৮টি ফাঁড়িতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা।এতে থানাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং হাজারের বেশি মামলার নথি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।এ ঘটনায় নগর পুলিশ প্রশাসন চরম বিপাকে পড়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার(অপরাধ ও অভিযান)আবদুল মান্নান মিয়া জানান,সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় কোতোয়ালী,পাহাড়তলী,আকবর শাহ, ইপিজেড,সদরঘাট ও পতেঙ্গা থানায়।এ ৬টি থানায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৫৮৯টি মামলার নথি।এর মধ্যে কোতোয়ালীতে ১৮৭,পতেঙ্গা থানায় ১০১,আকবর শাহ থানায় ১০২,পাহাড়তলীতে ৯১,ইপিজেডে ৬৬ এবং সদরঘাট থানায় পুড়ে গেছে ৪২টি মামলার নথিপত্র।
সিএমপি সূত্র জানা যায়,৮টি থানার মধ্যে ৬টি থানার দেয়াল ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছু নেই।পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আসবাবপত্র,ল্যাপটপ,কম্পিউটার,হাজারের বেশি তদন্তাধীন মামলার নথি,আলামত,এজাহার, চার্জশিট,আসামিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।নথি পুড়ে যাওয়া এসব মামলার ভবিষ্যৎ কি হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে নগর পুলিশ প্রশাসন।
সিএমপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,কিছু নথিপত্র হয়তো অনলাইনে পাওয়া গেলেও অধিকাংশ নথি আর পাওয়া যাবে না।ফলে এসব মামলার বিচারিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে।একই কথা বলেছেন আইন বিশেষজ্ঞরাও।
এবিষয়ে আবদুল মান্নান মিয়া বলেন,কিছু নথি পুলিশের কেন্দ্রীয় ক্রাইম ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম(সিডিএমএস)থেকে মিলবে বটে।কিন্তু মামলার আলামত,আসামির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও রেজিস্টার, ব্যক্তিগত ল্যাপটপে সংরক্ষণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি তো আর পাওয়া যাবে না।পুড়ে যাওয়া মামলার নথি কীভাবে জোগাড় করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।তবে থানায় থানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পুলিশকে বিপাকে ফেলেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরো জানান,কিছু মামলার নথি সিডিএমএস সার্ভারে থাকলেও ম্যানুয়াল নথিপত্র ও আলামত থাকে থানায়।আর ম্যানুয়াল নথিপত্রের কোনো ব্যাকআপ থাকে না।গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ম্যানুয়াল,পরোয়ানা রেজিস্টারও ম্যানুয়াল।এসব তো আর জোগাড় করা যাবে না।ফলে আদালতে ফৌজদারি মামলা পরিচালনায় বিপাকে পড়তে হবে পুলিশকে।
এদিকে,৫ আগস্ট নগরের ৮টি থানা এবং ৮টি ফাঁড়ি থেকে পাঁচ শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ১২ হাজার রাউন্ড গুলি লুট করে দুর্বৃত্তরা।এর মধ্যে গত বুধবার বিভিন্ন উৎস থেকে লুটের ৩৫টি অস্ত্র ও ২৭৫টি গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৭।
লুট হওয়া বাকি অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার(মিডিয়া)কাজী তারেক আজিজ।দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে নগরের ৮টি থানা ও ৮টি ফাঁড়ির অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি টাকা বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply